এবার কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ অবনতির দিকে যাচ্ছে। সময় যত বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্যা কবলিত মানুষের সংখ্যাও। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, এরই মধ্যে জেলার ১৪ উপজেলার ৭ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। যদিও বেসরকারি হিসেবে সংখ্যাটা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে।
এদিকে বুড়িচংয়ে গোমতী নদীর ভাঙনের ফলে বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। লোকালয়ে প্রবেশ করা পানির তীব্র স্রোতে মানুষের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গিয়েছে। খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ।
এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে গোমতী নদীর পানি। এছাড়াও বন্যাকবলিত জেলার চৌদ্দগ্রাম, তিতাস, নাঙ্গলকোট, লাকসাম মনোহরগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষ দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে কুমিল্লায় বন্যা শুরু হয়। এরই মধ্যে জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, সদর দক্ষিণ, বরুড়া, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়াসহ জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাই বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। সবখানেই বন্যার্তদের মাঝে হাহাকার দেখা গেছে। অনেক এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
মূলত ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে গত মঙ্গলবার থেকেই কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বাড়তে থাকে। ফাটল দেখা দেয় বাঁধের অন্তত ২০টি স্থানে। ভাঙন রোধে নদীর বাঁধ রক্ষায় নানা চেষ্টা চালাতে থাকে মানুষজন। মানুষের উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়ে গোমতীর পানি প্রবাহিত হতে থাকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। এরপরই রাত পৌনে ১২টার দিকে বুড়বুড়িয়া এলাকা দিয়ে ভেঙে যায় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ।
এই বাঁধ ভাঙার কারণে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে থাকে। নতুন করে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে প্রবল স্রোতসহ লোকালয়ে ঢুকছে পানি। ফলে দুই উপজেলার অন্যান্য গ্রামগুলোও প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলি বলেন, কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১১৮টি ইউনিয়নের ৭ লক্ষাধিক মানুষ। আমরা বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছি। সহায়তা অব্যাহত রাখতে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।
কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. নাসিমা আক্তার বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় আমাদের ২২৭টি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছেন তারা। কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পংকজ বড়ুয়া বলেন, দুর্গত এলাকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যাকবলিতদের জন্য শুকনো খাবার স্যালাইন ও ঔষধ মজুদ আছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত আছে।